• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

সাহিত্য

‘আমাদের চোখে মাকড়শা জাল বোনে’ ও ‘চোখের পল্লবে ঘুম নামে ‘

  • ''
  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০২৪

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিকী তালুকদার:

মাকড়সার জাল কেবল রূপক নয়, বাসস্তবও আছে। ‘হাওয়ায় দোলে জালের দোলা, চারদিকে তার জান্লা খোলা’এটি মাকড়সার জালের বর্ণনা। বাড়ির আনাচেকানাচে, ঘরের কোণ, অনেক দিন হাত না দেওয়া বইয়ের তাক মাকড়শাদের বেশি পছন্দের। আধা সেকেন্ডেই এক মোছায় তা সাফ করে ফেলা যায়। কিন্তু, একটু নিবিড়ভাবে খেয়াল করলে অবাক হতে হয়- এর নকশাসহ শৈলিকর্ম দেখে।

মাকড়সা নিজের শরীর থেকে রেশমের মতো সুতা বের করে জাল তৈরি করে বিভিন্ন নকশার। এই জালগুলোর নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকার আছে, উদ্দেশ্য আছে। মাকড়সা এই জাল দিয়ে খাবার জোগাড় করে। তাদের জালে পোকামাকড় আটকে পড়ে আর মাকড়সা তা খায়। বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরে গবেষণা করে মাকড়সার জাল সম্পর্কে এমন সব বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার করেছেন, যা অত্যন্ত চমকপ্রদ। মাকড়সার জালে রয়েছে কিছু বায়োলোজি, কিছু ক্যামেস্ট্রি। সেইসঙ্গে বেশ ফিজিক্স মানে পদার্থবিজ্ঞান। মাকড়সার শরীরের নির্দিষ্ট গ্রন্থি থেকে জাল তৈরির তরল উপাদান বের হয়। বাতাসের সংস্পর্শে এসেই তা বিশেষ ধরনের সূক্ষ্ম সুতায় পরিণত হয়, যা দিয়ে মাকড়সা জাল তৈরি করে। মাকড়সার গ্রন্থিগুলো শরীর থেকে প্রোটিন সংগ্রহ করে এই সুতার উপাদান বানায়। এই উপাদানের প্রক্রিয়াটা রসায়নের অন্তর্ভুক্ত। প্রোটিন মূলত অ্যামিনো অ্যাসিড, যা কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক শিকল। মাকড়সার জালের এই রাসায়নিক শিকল খুবই লম্বা। এই জালে অন্যান্য কীটপতঙ্গ ধরা পড়লেও মাকড়সা নিজে ধরা পড়ে না। মাকড়সার বিচিত্র জটিল জালের মধ্যে সব ফিনফিনে সুতোই আঠালো হয় না, ওর মধ্যে কিছু অংশ আঠাহীন নিরাপদ সুতাও রয়েছে। মাকড়সা নিজে জালের ভালো অংশগুলোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি থাকে। জটিল অংশগুলো এড়িয়ে চলে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানেও মাকড়শার জাল কথাটি প্রচলিত। চোখের অসুখ বোঝাতে গিয়ে বলা হয়, মাকড়সার জালের মতো প্যাঁচানো মনে হয়। রেটিনা বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেন। লাইট জ্বালিয়ে-নিভিয়ে পরখসহ নানাভাবে পরীক্ষা করেন। আবার বাংলা প্রবাদ- প্রবচনেও মাকড়শার জালের জায়গা হয়েছে নানাভাবে। সুকুমার রায়ের ‘মূর্খ মাছি’ কবিতায় রয়েছে, মাছিকে লোভে ফেলে মাকড়সার জালে টেনে আনার কথা। আধুনিককালের লেখক, গণমাধ্যমকর্মী খান মুহাম্মদ রুমেল মাকড়শার জালকে নিয়ে এসেছেন আরেকভাবে। ‘আমাদের চোখে মাকড়শা জাল বোনে’ গল্পে যার এক অনবদ্য বর্ণনা। যেখানে চোখকে করা হয়েছে বেশ প্রাসসঙ্গিক। আকর্ষণীয় ১২টি গল্পে তা থরে থরে সাজানো।

এবারের বইমেলায় রুমেলের ’চোখ’ শব্দ যুক্ত আরেকটি বই ‘চোখের পল্লবে ঘুম নামে ‘। এটি কবিতার বই। ১১৮টি কবিতা নিয়ে সাজানো বইটির মুদ্রিত মূল্য ৩০০ টাকা। তিনি বইটি উৎসর্গ করেছেন আরেক লেখক ও সাহিত্যিক মনি হায়দারকে। আর গল্পের বই ‘আমাদের চোখে মাকড়শা জাল বোনে’ উৎসর্গ করেছেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রেজানুর রহমানকে । এটির মুদ্রিত মূল্যও ৩০০ টাকা। এবারের বাংলা অ্যাকাডেমির বইমেলায় বেশ সাড়া জাগানো বই দু’টিই প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ। এর আগে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে তার লেখা কলাম ‘রিপোর্টারের নোটখাতা’।

খান মুহাম্মদ রুমেল পেশাদার সাংবাদিক। সময় টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই যুক্ত সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে। কুড়িয়েছেন ব্যাপক সুনাম, পেয়েছেন স্বীকৃতি। এখন পর্যন্ত প্রকাশ হয়েছে তার লেখা এগারোটি বই। কবিতায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ঢাকা ব্যাংক আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’। পেয়েছেন সোনার বাংলা সাহিত্য পুরস্কার - ২০২২। এছাড়া ‘জুম বাংলা তরুণ কবি সম্মাননা’, ‘ক্র্যাব লেখক সম্মাননা’সহ আরও অনেক প্রাপ্তি তার ঝুড়িতে।

লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোষ্ট | প্রকাশক বাংলাদেশ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা |

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads